সোহেলী জান্নাত
(ফেসবুক পোস্ট)
একদেশে এক রাজা ছিলো, যার ছিলো নতুন পোশাকের প্রতি অসম্ভব ফ্যাসিনেশান! প্রতিদিন পরার জন্য নিত্যনতুন ডিজাইনের পোশাক তার চাই ই চাই ! রাজার এই নিত্যকার বায়না মেটাতে মেটাতে রাজ্যের দর্জিরা একটাসময় ক্লান্তহয়ে পড়লো! রাজার অনুরোধ, শাসন কিছুতেই আর তাদের মাথা দিয়ে নতুন ডিজাইন বেরোলো না।
তখন রাজা তার বিশেষ খায়েস পুরনে নতুন পোশাকের জন্য অর্ধেক রাজ্য আর পুরো রাজকন্যা উপহার ঘোষণা করলেন।এরই সুযোগ নিল দুষ্ট কিছু লোক। তারা রাজাকে গিয়ে বল্লো আমরা আপনাকে নতুন ডিজাইনের পোশাক বানিয়ে দেব, কিন্তু আমাদের একশত ভরি সোনা রুপা আর নির্জন স্থান দিতে হবে!
রাজা তখন পোশাকমোহে অন্ধ! আগামাথা না ভেবেই বললেন তথাস্তু!
তো এভাবে মাস গরিয়ে গেলো, কিন্তু নতুন পোশাক আর আসে না। তখন রাজা তার সেনাপতিকে পাঠালেন নতুন পোশাকের খোঁজ নিতে। সেনাপতি সেখানে গিয়ে দেখেন পোশাক টোশাক কিছুই নেই, কেবল এক লোক পান চিবুতে চিবুতে খালি চরকা কেটে চলেছে।
সেনাপতি রাগে আগুন হয়ে বললেন হতচ্ছাড়ার দল! এত সোনারুপা নিলি, রাজার পোশাক কই? গর্দান নেব এক্ষুণি!
সেই লোকের কাঁচুমাচু উত্তর: হায়! হায়! সেকি! আপনি পোশাক সত্যি সত্যি দেখতে পাচ্ছেন না?
: নাতো! কোথায় পোশাক! ইয়ার্কি করিস? দাঁড়া..!
: আসলে জনাব, আপনাকে তবে খুলেই বলি।এটা এক বিশেষ পোশাক! যার জন্মের ঠিক নেই তিনি এই বিশেষ পোশাক দেখতে পাবেন না!
: হা ইশ্বর! আগে বলবিতো হতভাগার দল! ওরে, আমিতো পোশাক দেখতেই পাচ্ছি! আহ! এতভাল পোশাক আমি জীবনেও দেখিনি।খুব ভাল কাজ করেছিস তোরা!
সেনাপতি কোনোমতে মান বাচিয়ে আসলে সেখান থেকে পালালেন! ভাবা যায়, যদি রাজা জেনে যান তার জন্মের ঠিক নেই তবে কী হবে তার!
রাজাকে গিয়ে তাই বানিয়ে বানিয়ে পোশাকের অনেক প্রশংসা করলেন! সেনাপতির মুখে পোশাকের গুনগান শুনে রাজা খুব খুশি হলেন। এবার পাঠালেন মন্ত্রী মশায় কে।মন্ত্রীও যথারীতি পোশাক দেখতে পেলেন না! কিন্তু যেই না শুনলেন পিতার জারজ সন্তান এটা দেখতে পাবে না অমনি তার চোখে নান্দনিক শিল্পকুশলতায় পোশাকটি ভেসে উঠলো। আসলে তিনি কিছুই দেখেন নি, কিন্তু রাজাকে এসে অতিমাত্রায় প্রশংসা শোনালেন। রাজা এবার মন্ত্রীর মুখে এমন গুণকীর্তন শুনে ঘোষণা করলেন আগামী প্রজাদিবসে রাজা এই বিশেষ পোশাক পরে প্রজাদের দেখা দেবেন।প্রজারা আশায় বুক বাঁধলো।
যথাদিনে দুষ্ট লোকের দল পোশাক আনার ভান করে সভায় এল। কিন্তু তাদের হাতে পোশাক নেই দেখে রাজা ভয়ানক ক্ষেপে গেলেন।কিন্তু দুষ্টরা যেই না বল্ল জারজ সন্তান দেখতে পাবে না.... ইত্যাদি ইত্যাদি। অমনি রাজা বললেন আহা! এত নিঁখুত কাজের পোশাক! আমি কল্পনাও করিনি।এক্ষুনি রাজকন্যা রাজত্ব দিয়ে দিলাম তোমাদের।
বললেন ঠিকই কিন্তু আড়চোখে মন্ত্রী সেনাপতির বিনয়ে গদগদ মুখের দিকে চেয়ে মনে মনে ভাবলেন, আহা রাজার ছেলে হয়ে শেষে এই! সভার প্রত্যেকের পিতা আছে, কেবল আমিই জারজ!
মূলত সভায় উপ্সথিত কেউই পোশাক দেখতে পাচ্ছিল না, তাই প্রত্যেকেই ভাবছিলো রাজাকে এই কথা কীকরে বলি! পিঠ বাচঁবে না! কিন্তু সবাই রাজার ভুয়সী প্রশংসা করলেন।
ক্রমে ক্রমে রাজ্যেও রটে গেল এই বিশেষ খবর। ফলে রাজা যখন মুকুট মাথায় হাতির পিঠে সম্পূর্ণ ন্যাংটো হয়ে প্রজাদের মধ্যে গেলেন, প্রত্যেকেই দেখলো,বুঝলো রাজা ন্যাংটো,কিন্তু ব্যক্তিস্বার্থে কেউ মুখ খুললো না।সত্যি বলার সৎ সাহস দেখালো না।
অত:পর এক বাচ্চা ছেলে রাজ্যের রাজার এই নগ্নদশা দেখে হাততালি দিয়ে স্পষ্ট ঘোষণা করলো: কী মজা! কী মজা! হাতির পিঠে ন্যাংটো রাজা!
এরপর রাজার চোঁখ খুলে গেল।তিনি বুঝলেন কী বোকামিটাইনা করে ফেলেছেন একগুঁয়ে মোহে পরে।
তখন রাজ্যবাসীও মুখ খুললো আওয়াজতুলে অবস্থা বুঝে!
ততক্ষণে কিন্তু দুষ্ট লোকেরা পগার পার!
দেরী হয়ে গেছে বড্ডো!
২. ছাত্রনেত্রী এশার জন্য মায়ায় বিগলিত হয়ে যারা "স্টান্ড ফর এশা" নামে এশাকে জুতার মালা পরানো নিগৃহীত ভিডিও ভাইরাটিল করছেন, সাবেক ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের সেই রূপকথার স্পষ্টবাদী বাচ্চা ছেলের মতো এশার পক্ষ নিয়ে প্রকাশ্যে স্টাটাস দেয়ার আগ পর্যন্ত আপনারা কোথায় ছিলেন? নাকি কেন্দ্রের মনোভাব কোনদিকে ধায়, সেটা দেখে পক্ষ নেবার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু বিশ্বাস করুণ এটা মানবিকতা নয়, অবস্থা বুঝে তেলদেয়া! স্রেফ হিপোক্রেসি।
৩.
এশা দোষী না পরিস্থিতির শিকার সেটা আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই না, কারণ আমি তাদের কাউকেই ব্যক্তিগত ভাবে চিনিনা কিছুই নিজ চোঁখে দেখিনি, যা দেখেছি ভারচুয়াল! এতে স্থির সিদ্ধান্ত নিতে নেই।
কিন্তু বুঝি সিদ্ধান্তগুলো নিতে বড্ডো তাড়াহুরো হয়ে গেছে। বহিস্কার, প্রত্যাহার, স্বপদে বহাল, দ্রুত তদন্ত, আবার একসংগে ২৪ জনকে বহিস্কার! সবকিছু কেমন যেনো সিনেমাটিক ওয়েতে নিমিষেই ঘটে যাচ্ছে!শেষ পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় সেটিই এখন ভাবনার বিষয়।তবে সবার বিবেচনাবোধ যেহেতু এক নয়! হতে পারে তাদের দিক দিয়ে এটা ঠিক আছে।
কিন্তু প্রবাদ আছে তাড়াহুড়োর ফল মিঠে নয়! একটা তাড়াহুরো সংক্রান্ত কাল্পনিক গল্প বলে লেখাটা শেষ করি আজ। গল্পটা নেটে পাওয়া।
একদা জাতিসংঘের আহবানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বি,এন, পি নেত্রী, এরশাদ চাচা, হেফাজতি মুরুব্বি সবাই মিলে প্লেনে চেপে আমেরিকা যাচ্ছিলেন।তাঁদের সংগে জনগণের প্রতিভু হিসেবে ছিল ছয় বছরের স্কুল গোয়িং পিচ্চি এক বালক।
তো মাঝপথে পাইলট ঘোষণা করলেন, "মান্যবর! যান্ত্রিক ত্রুটিতে প্লেন এখুনি ক্রাশ করবে! আমি একটি প্যারাশুট নিয়ে ঝাপ দিচ্ছি, আপনাদের জন্য রেখে গেলাম চারটি প্যারাশুট! আত্মরক্ষা করুণ।"
প্রথমে প্রধানমন্ত্রী বললেন," আমি না গেলে পদ্মাসেতু কে বানাবে, প্যারাশুট নিয়ে দিচ্ছি ঝাপঁ!"
বি এন পি নেত্রী বললেন" আমি না গেলে ওনার ভুল কে ধরবে! দিচ্ছি ঝাপঁ!"
এবার এরশাদ আংকেল দেখেন আরে! দুটো প্যারাশুট অলরেডি গন! হুজুর আর বাচ্চাকে বললেন, "তোমরা যা পারো কর! আমি অপঘাতে মরতেপারবো না এই বয়সে দিলাম ঝাপঁ!"
এবার বয়স্ক হুজুর বাচ্চা ছেলেকে ডেকে বললেন আমি অনেকটা কাল বেঁচেছি! যেহেতু একটাই প্যারাশুট আছে, তুই তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পর! আমার কথা ভাবিস না!
বাচ্চা ছেলে হেসে বললো, হুজুর! চিন্তা করবেন না। বাচঁলে দুজনেই বাঁচবো!
: কী করে? প্যারাশুটতো একটা আছে!
ছেলেটা এবার হা হা করে হেসে উঠলো!
: না! প্যারাশুট দুটোই আছে! এরশাদ চাচ্চু তাড়াহুরো করে নামতে গিয়ে আমার স্কুলব্যাগ নিয়ে ঝাঁপ দিয়েছেন!
বি.দ্র: লেখাটা নিছকই তুচ্ছ লোকের তুচ্ছ এক স্টাটাস! গগভীরতম ভাবনার দরকার নেই।
ধন্যবাদ।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন